এগারসিন্দুর স্থানটি নানা ঘটনায় এবং স্থাপনায় ঐতিহাসিক। একসময়ের প্রাচীন নগরী ছিল এটি। এই গ্রামেই রয়েছে বীর ঈসাখাঁর দূর্গ। লাল মাটি আর সবুজ গাছপালায় পরিবেষ্টিত গ্রামটি ইতিহাস ঐতিহ্য সমৃদ্ধ ভরপুর। এগারসিন্দুরের শাহ মাহমুদ মসজিদটি প্রায় সাড়ে ৩শ’ বছরের পুরনো। শেখ শাহ মাহমুদ মসজিদটি অপূর্ব স্থাপত্য শৈলীর এক অনুপম নিদর্শন। এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে সুবেদার শায়েস্তা খাঁ’র আমলে।

অযত্ন আর অবেলায় পড়ে রয়েছে ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলো। সরকারি বা বেসরকারী সংরক্ষণের জন্য নেই কোন উদ্যোগ। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেেও জোড়ালোভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ চোখে পড়ছেনা। অবহেলায় এভাবেই চোখের সামনে দিয়ে এক সময় হারিয়ে যাবে ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো। প্রতিদিন কেউ না কেউ আসছেন দেখার জন্য। ঐতিহাসিক স্থাপনাটি দেখে পুলকিত হচ্ছেন তারা। মসজিদে যারা নামাজ পড়েন তাদের অধিকাংশ প্রবীন মানুষ।

‘বাপ দাদাদের কাছ থেকে শুনে আসছি মসজিদের বিষয়ে। তারাও নামাজ পড়তেন এখানেই। আমিও সেই ধারাবাহিকতায় এখানে নামাজ পড়ে মনে শান্তি পাই। পূর্ব পুরুষরাসহ কত মানুষ এখানে নামাজ পড়ছে তারা এখন দুনিয়াতে নেই। কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর গ্রামের শেখ শাহ মাহমুদ মসজিদটি অপূর্ব স্থাপত্য শৈলীর এক অনুপম নিদর্শন। এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে সুবেদার শায়েস্তা খাঁ’র আমলে।

জনশ্রুতি রয়েছে, মসজিদটি নির্মাণ করেছেন এগারসিন্দুরের প্রখ্যাত ধনাঢ্য বণিক শেখ মাহমুদ। মোঘল আমলের শিল্পরীতি ও স্থানীয় শিল্পরীতির সমন্বয়ে নিপুণ কারিগরের দক্ষতায় এ মসজিদটি হয়ে ওঠে নান্দনিক অপূর্ব। এগারসিন্দুর গ্রামটির রয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য। বার ভূঁইয়ার প্রধান বীর ঈশাখাঁর দুর্গ ছিল এখানে। ঈশাখাঁ ও মোঘল সেনাপতি মানসিংহের মধ্যে ঐতিহাসিক যুদ্ধও হয়েছিল দুর্গ সংলগ্ন পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে।

বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় লাল মাটির এ অঞ্চলটি প্রাচীনতম। তার নিদর্শনও রয়েছে। এগারসিন্দুর গ্রামে একাধিক প্রাচীন সমাধি রয়েছে।

এই গ্রামের কাছাকাছি দু’টি প্রাচীন মসজিদের মধ্যে স্থাপত্য শৈলীর একটি হল শাহ মাহমুদ মসজিদ। এ সৌন্দর্য ও তাৎপর্য ভিন্নমাত্রার দাবিদার, মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের উজ্জল নিদর্শন।

মসজিদের পথেই রয়েছে জোড় প্যাটার্নের বাংলো। এ মসজিদের পুরাকীর্তি সবার নজর কাড়ে। বর্গাকৃতি মসজিদের প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য ৩২ ফুট। এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের চার কোণায় আট কোণাকৃতির বুরুজ রয়েছে। এতে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে মসজিদের সৌন্দর্য।

পূর্ব দেয়ালে ৩টি দরজা (প্রবেশ পথ) রয়েছে। তার মধ্যে মাঝেরটি অপেক্ষাকৃত একটু বড়। উত্তর ও দক্ষিণে রয়েছে একটি করে দরজা (প্রবেশ পথ)। ঝাজদী নকশায় অন্ধকুলঙ্গির পোড়ামাটির চিত্রফলক মসজিদের ভেতর ও বাইরের সৌন্দর্যকে বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে।

পূর্ব দিকে রয়েছে প্রশস্ত প্রাঙ্গণ। প্রাঙ্গণের পূর্বদিকে ঠিক মাঝে রয়েছে জোড় বাংলো প্যাটার্নে নির্মিত বালাখানা। এ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মাহমুদের উত্তরসুরিরা বসবাস করেছেন মসজিদের পাশেই।

মোঘল আমলের চারটি প্রাচীন মসজিদ রয়েছে পাকুন্দিয়া উপজেলায়। তার দু’টিই অবস্থিত এগারসিন্দুর গ্রামে। অপর মসজিদটির নাম শেখ সাদী মসজিদ। যা শাহ মাহমুদ মসজিদ থেকে প্রায় ২৫০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত।

 

(সংগৃহীত)